বিজ্ঞাপন

শিরোনাম

6/recent/ticker-posts-pabnatimes

আজ বরেণ্য রাজনৈতিক কবি পাঞ্জাব বিশ্বাসের জন্মদিন


।।  মহিউদ্দিন ভূইয়া ।। 

পাবনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, দক্ষ সংগঠক, সুবক্তা এবং বরেণ্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পবনার কৃতিসন্তান পাঞ্জাব আলী বিশ্বাসের আজ শুভ জন্মদিন। 

পাবনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, দক্ষ সংগঠক, সুবক্তা এবং বরেণ্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, পাবনার কৃতিসন্তান পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস ১৯৫৮ সালের আজকের এই দিনে পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার সড়াবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আজাহার আলী বিশ্বাস ও মাতা হারেজান বিশ্বাস। পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে পাঞ্জাব বিশ্বাস তৃতীয়।

পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস পার-খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি পার-খিদিরপুর উচ্চ বিদ্যলয় থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি পাস করে নাটোরের সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। সে সময় তিনি বিপ্লবী গণবাহিনীর রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ফলে প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করলে তিনি নাটোর ছেড়ে আত্মগোপন করে নিজ জেলায় চলে আসেন এবং ঈশ্বরদী মহাবিদ্যালয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হন। এখানেও মাজপাড়ার চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় তাঁকে মিথ্যেভাবে জড়ানো হলে পুনরায় তিনি আত্মগোপনে যান। পরে নাটোরের গোপালপুর মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৭৭ সালে আবদুলপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ওই বছরেই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যায়নকালে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগ (বিপ্লবী গণবাহিনী)-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং জেলা সংগঠনের নির্দেশক্রমে একই বছরে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে বাংলাভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। জাসদ প্রকাশ্য রাজনীতির অনুমতি পেলে ১৯৭৮ সালের সম্মেলনে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগ (জাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং এডওয়ার্ড কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ ১৯ দফা উন্নয়ন দাবিতে আন্দোলন করেন। তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী কাজী জাফরের উপস্থিতিতে এডওয়ার্ড কলেজে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন-সংক্রান্ত আলোচনা সভায় প্রকাশ্য-বিরোধিতা করায় এডওয়ার্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে ফোর্সটিসি দিলে তিনি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে সাব-সিডিয়ারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে ছাত্র-আন্দোলনের চাপে এডওয়ার্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ফোর্সটিসি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় এবং তিনি পুনরায় এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। ১৯৮২ সালে পাঞ্জাব বিশ্বাস দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক (সম্মান) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ, পাবনা থেকে তিনি এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।

পাঞ্জাব আলী বিশ্বাসের কর্মজীবন শুরু হয় ঠিকাদারি ব্যবসার মাধ্যমে। ১৯৯০ সালে তিনি ‘শুভ রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পিপিএল’ (প্রগ্রেসিভ পলিসি অব লাইফ)-এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে তিনি আটঘরিয়ায় খাস জমিতে ৩টি আদর্শগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলে ১৮০টি নিঃস্ব ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়।

পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস মাজপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, আটঘরিয়া থানা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া’ আসনে জাসদের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় শ্রমিক জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাচিত সহ- সভাপতি এবং জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জাসদের ভাগাভাগি হলে দীর্ঘদিন তিনি রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকার পর ২০০২ সালে তিনি আওয়ামীলীগে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পাঞ্জাব বিশ্বাস পার-খিদিরপুর ডিগ্রি কলেজ, দরগাহ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আজাহার আলী উচ্চ বিদ্যালয়, রামেশ্বরপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আটঘরিয়ার একদন্ত এলাকায় ‘পাঞ্জাবনগর গ্রাম, পাঞ্জাবনগর হাট ও পাঞ্জাবনগর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া পাবনা চিনিকল স্থাপনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 

রাজনীতির পাশাপাশি তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ – উপন্যাস : স্বপ্নসিঁড়ি; বিষ কবর; ধূসর মরীচিকা; স্বর্গসিঁড়ি; জীবনের জলছবি; ব্যাংক নারী ও দেশ। কাব্যগ্রন্থ সূর্য্যের রশ্মিতা; শূন্যের ছায়াতলে,  ঝুলন্ত আসমান, কালের তরী ইদ্যাদি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সমসাময়িক বিষয়ের উপর নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন।

আমরা এই গুণী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের দীর্ঘজীবন, রাজনৈতিক ও কর্মজীবনের সফলতা এবং আমৃত্যু সুস্থতা কামনা করি।

লেখক-
অনলাইন লেখক ও কলামিষ্ট। 


(পরিমার্জিত ও সংশোধিত) 

Post a Comment

0 Comments