বিজ্ঞাপন

শিরোনাম

6/recent/ticker-posts-pabnatimes

২৭ নভেম্বর ধুলাউড়ি গণহত্যা দিবস


আব্দুদ দাইনঃ
২৭ শে নভেম্বর পাবনার সাঁথিয়ার ধুলাউড়িতে ভয়াল হত্যাযজ্ঞের দিন। ২৭ শে নভেম্বর ১৯৭১। রাত আনুমানিক ৩টা। চারদিকে গা ছমছম করা থমথমে ভাব, ভুতুরে নিরবতা। দূরে কুকুরের করুণ সুরের গোংড়ানি যেন অশুভ ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে। 

হঠাৎ গুলির শব্দ। দালালের সহায়তায় পাঁচশ পাকসেনা খুবই কৌশলে ধুলাউড়ি গ্রাম ঘিরে ফেলেছে। কথিত আছে পার্শ্ববতী বেড়া থানার জোড়দহ গ্রামের আসাদ নামের জনৈক দালাল ছিল এই নির্মম হত্যা কান্ডের পথ প্রদর্শক। ডিউটিরত মুক্তিযোদ্ধারা সময় মত তাদের সহযোদ্ধা বা গ্রামবাসীকে সতর্ক করার কোন সুযোগ পায়নি। 

ভোররাত থেকে শুরু হয় পাকসেনাদের তান্ডব লীলা। একাধারে চলতে থাকে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষন ও অগ্নি সংযোগ। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধা ও ঘুমন্ত গ্রামবাসী হতবিহবল হয়ে প্রান ভয়ে দিক বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। পাকসেনারা বাড়িবাড়ি থেকে যুবতী মেয়েদের ধরে একটি বড় আম গাছের নিচে নিয়ে এসে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে গা থেকে গহনাপত্র খুলে নিয়ে লাথি মেরে পাশ্ববর্তী খালে ফেলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও বহু গ্রামবাসীকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। রশি দিয়ে একত্রে বেঁধে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে এসে ব্রাশ ফায়ারে নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। 

ওইদিনের হত্যাকান্ডে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা সহ ১৯ জন গ্রামবাসীর লাশ সনাক্ত করাহয়। এরা হচ্ছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খবির উদ্দিন (পদ্মবিলা), আখতার হোসেন (ইসলামপুর), দ্বারা হোসেন (রঘুনাথপুর), চাঁদ বিশ্বাস (রঘুনাথপুর), মহসীন আলী (কাজিপুর), শাহজাহান আলী (চরতাঁরাপুর), মকছেদ আলী (বামুনডাঙ্গা), মুসলিম উদ্দিন (চরতাঁরাপুর)। 

হত্যার শিকার গ্রামবাসীরা হচ্ছেন, আবুল কাশেম ফকির , ডাঃ আঃ আওয়াল, জহুরুল ইসলাম ফকির, আঃ রশিদ ফকির, আঃ গফুর, আঃ সামাদ বান্যে, নইম উদ্দিন খলিফা, ওয়াজেদ আলী, কোবাদ বিশ্বাস, আখতার হোসেন তালুকদার, মাহখনবি প্রমুখ। 

সে দিন পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়া ৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের গায়ের চাদর দিয়ে জড়িয়ে কোন মতে ধুলাউড়ি ফকির পাড়া প্রাইমারী স্কুলের সামনে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। আরও রাখা হয় ব্রাশ ফায়ারে নিহত ১০/১১জন গ্রামবাসীকে। সেটি এখন গনকবর হিসাবে পরিচিত। 

সে দিনের ব্রাশ ফায়ারে বেঁচে যাওয়া শাহজাহান (পাকসেনারা বেয়নেট দিয়ে যার গলা কেটে দিয়েছিল) বর্তমানে গলাকাটা শাহজাহান হিসেবে পরিচিতি নিয়ে বেঁচে আছেন। 

৭১ এর ধুলাউড়ির সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞ এখনো সাঁথিয়াবাসীর কাছে দুঃখ ও বেদনার স্মৃতি হয়ে আছে। ধুলাউড়ির শহীদদের স্মরণে বর্তমান আ’লীগ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বধ্যভূমি সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাড. শামসুল হক টুকুু এমপি’র প্রচেষ্টায় নতুন আঙ্গিকে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। 

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দিবসটি যথাযথভাবে পালনের উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments