।। মঞ্জুর মোর্শেদ খান রিয়েন ।।
২০১৩ সাল। আমার প্রথম অপারেশন হবে। হাসপিটাল এ ভর্তি। অপারেশনের জন্য সব মিলে ১২ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। সিনিয়র সহকর্মী পারভেজ নাদির রেজা ভাই ও বস্ দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ভাই চেষ্টা করছিলেন আমার অপারেশনের টাকা যেন জোগাড় হয়।
সে সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার এডভোকেট সাহারা খাতুন আপা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করলেন আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা সাথে সাথে এককালীন তিন লক্ষ টাকা মঞ্জুর করলেন। তৎকালীন মন্ত্রী শ্রদ্ধেয় সাহারা আপা গণভবন থেকে বের হয়েই আমাকে ফোন করে জানালেন" রিয়েন নেত্রী তোমাকে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছেন"।
আজ যে কারনে এই পুরনো কথা লেখা তা হলো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের গণভবনে একটি অনুষ্ঠানে অসুস্থ শরীরে বক্তৃতা শুরুর সময় বঙ্গবন্ধু কন্যার ম্নেহ এবং মমতা দেখে সবার মত আমিও আপ্লুত। এই হলো বাঙ্গালীর গর্বের ধন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এই স্নেহ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছেই আশা করা যায়।
আমি একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী। আমাকে তো তাঁর চেনার কথা না। কিন্তু দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়নি আমি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার শ্রদ্ধেয় চাষী নজরুল ইসলাম যিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে "হাঙ্গর নদী গ্রেনেড" সিনেমা নির্মাণের জন্য বিএনপি মতাদর্শের অনুসারী জনাব চাষী নজরুল ইসলামকে সরকারি অনুদান দেয়। প্রথম অপারেশনের সময় তিনি আমাকে দেখতে আসলেন। তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে সরাসরি প্রশ্ন " শেখ হাসিনা তোকে কেন চিকিৎসার জন্য টাকা দিলো, বল? তুই কি এমন কি করেছিস?" আমি তো তার প্রশ্নে নিরুত্তর । আমার ভড়কে যাওয়া চেহারা দেখে সবাই যাকে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসাবে চিনেন সেই চাষী নজরুল ইসলাম সোজা করে মন্তব্য করলেন "শোন চুপ করে গেলিতো, এ হচ্ছে শেখের বেটি সে জন্য অন্তরে মমতা আছে, বেগম জিয়া হলে বলতো কিসের সাংবাদিক রিয়েন হটাও এসব ফাইল( হাসতে হাসতে বলেছিলেন)"।
এবারও আমার তৃতীয় অপারেশনের জন্য যখন অনেক চেনা মানুষের কাছে বুঝে না বুঝে সাহায্য চেয়ে এমন শিক্ষাও পেয়েছি যে আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে ঠিক তখনও আমি অচেনা অজানা রিয়েনকে রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন।
টাকার অঙ্কে স্নেহ, মমতা বিচার করা যায় না। কিন্তু কিছু ঘটনা সময়ের প্রেক্ষিতে মনে দাগ কেটে থাকে। অসহায় মানুষের পাশে সবাই স্নেহের হাত রাখতে পারে না।
আমার চিকিৎসার জন্য সিনিয়র সাংবাদিক, পুলিশ কর্মকর্তা, সহকর্মী, সামরিক কর্মকর্তা,রাজনীতিক, প্রবাসী, ব্যাংকের চেয়ারম্যান, কূটনীতিক, বন্ধু ,পরিচিত, অপরিচিত শুভাকাঙ্খী অনেকেই পাশে থেকেছেন। কেউ আর্থিক সাহায্য করেছেন, কেউ দোয়া করেছেন, কেউ কথা বলে সাহস যুগিয়েছেন আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। অপারেশনের পর এখনো আমার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছি। দোয়া চাই আল্লাহ যেন আমাকে সুস্থতা দান করে। পরম করুণাময় সকলের মঙ্গল করুক।
লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে।
0 Comments